দান করা হল বিশ্বাসীর জীবনের একটি পরিচর্যা
যে কোন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে অন্যান্য পরিচর্যার
মত দান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচর্যা। কারন এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের প্রতি তার ভালবাসা,
ভক্তি, বাধ্যতা ও সম্মান দেখানো হয়। তবে এটি ব্যবস্থার এমন কোন যোয়ালী নয় যে, না পারলেও
তা বইতে হবে। এটা প্রত্যেক উপার্জনশীল ব্যক্তির একটা পবিত্র কর্তব্য ও গৌরবময় অধিকার।
২ করি ৯:৭ পদে পৌল বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তি
আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সংকল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্বক বা আবশ্যক বলিয়া
না দিউক, কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন। প্রভুর জন্য প্রত্যেক বিশ্বাসীর
যে কিছু কর্তব্য আছে এ বোধ যখন হৃদয়ে জাগে, তখন তিনি ঈশ্বরকে না দিয়ে থাকতে পারেন না,
তার হাতকেও বন্ধ করে রাখতে পারেন না। আমাদের উপার্জিত প্রতিটি টাকাই প্রভু যীশুর পাওনা,
কারন তিনি মূল্য দিয়ে আমাদের কিনেছেন (১ করি ৬:২০)।
এ পৃথিবীতে আমাদের যা কিছু আছে তার মালিক ঈশ্বর
(গীত ২৪:১)। আমরা অনেক সময় ভাবি, আমরা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করি, সুতরাং এ অর্থ
আমাদের। এটি যেমন খুশী ব্যবহার করার অধিকার আমাদের আছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, ঈশ্বর যে কোন ব্যক্তিকে ধন সম্পত্তি দান করেন,
তাহাকে তাহা ভাগ করিতে, আপন অংশ লইতে ও আপন পরিশ্রমে আনন্দ করিতে ক্ষমতা দেন, ইহাই
ঈশ্বরের দান (উপদেশক ৫:১৯)। কে আমাদের দেহে শক্তি দেন? কে আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি
দেন? কে আমাদের অর্থ উপার্জন করার ক্ষমতা বা দক্ষতা যোগান? সবই ঈশ্বর দেন। সবই তার
অনুগ্রহের দান। তাই আমরা যদি তার রাজ্য ও ধার্মিকতাকে প্রথম স্থান না দিই, তাকে আমাদের
আয়ের নিরূপিত অংশ (১০%) যদি না দিই, তাহলে তার প্রতি আমাদের অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ পায়।
এজন্য শলোমন বলেছেন, তুমি সদাপ্রভুর সম্মান
কর আপনার ধনে, আর তোমার সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাংশে, তাহাতে তোমার গোলাঘর সকল বহু শস্যে
পূর্ণ হইবে, তোমার কুন্ডে নূতন দ্রাক্ষারস উথলিয়া পড়িবে (হিতোপদেশ ৩:১০)। এটা বলতে
লজ্জা নেই যে, অনেকের দান ২ টাকা, ৫ টাকা, ও ১০ টাকাতে সীমাবদ্ধ। গীর্জায় চাঁদা তোলার
সময়ে অনেকে পকেট হাতড়ে সবচাইতে ছোট অংকের টাকা বের করে। মন্ডলীতে প্রভুর কাজের জন্য
চাঁদা ধার্য হলে বা দশমাংশ দেবার কথা উঠলে সমালোচনা হয়, অনেক ওজর আপত্তি উত্থাপিত হয়।
এ ধরনের বিশ্বাসীদের জীবন কখনই কোনদিন উচ্চস্তরে উঠতে পারেনা। তাদের কৃপণ তাই তাদের
উপরে ওঠার বা উন্নতি লাভের পথ বন্ধ করে দেয়। তাই আমরা যদি দান করাকে একটি পরিচর্যা
হিসেবে মনে করে থাকি তাহলে উদার চিত্তে হাত খুলে দান করতে হবে। এরকম দানের পরিচর্যার
দৃষ্টান্ত বাইবেলে অনেক রয়েছে। যেমন পুরাতন নিয়মে বিধবার দান যিনি তার শেষ সম্বল একমুঠো
ময়দা ও সামান্য একটু তেল যা ছিল তা দিয়ে একটা পিঠা বানিয়ে ঈশ্বরের ভাববাদীকে খাইয়েছিলেন
(১ রাজাবলি ১৭ অধ্যায়) নূতন নিয়মে দরিদ্রা
বিধবা তার সর্বস্ব দুটি সিকি পয়সা ঈশ্বরের ভান্ডারে দান করেছিলেন ( লূক ২১:১-১৪),
আর একটি যুবতি মেয়ে লাসারের বোন তার সব জমানো টাকা দিয়ে অত্যন্ত দামী আতর কিনে সব আতর
যীশুর মাথায় ঢেলে দিয়েছিল ও তাকে অভিষেক করেছিল।